Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
We Can
Image
Attachments

 আমরাই পারি।

                                 মোঃ মতিউর রহমান খান

 

করোনার ভয়াল থাবায় পুরো পৃথিবী কাত হয়ে পড়েছিল। পৃথিবীর তাবৎ রথী মহারথী দেশগুলো জর্জরিত হয়ে পড়েছিল এ বিশ্ব মহামারীতে। এমনই এক দূর্যোগের আগমন ঘটে এদেশে ৮ই মার্চ, ২০২০ খ্রিস্টাব্দে। যে মহামারীতে নাকাল হলো সকল পরাশক্তি, তার আঘাতে কি জানি কি হয়! সকলের কপালেই চিন্তার ভাঁজ।

সময়ের চাকা ঘুরলো। যে ভাইরাসের আঘাতে পৃথিবীর সকল দেশ পরাজয় বরণ করলো, নতি স্বীকার করলো; তাকে মোকাবেলায় বাংলাদেশ দেখালো অসাধারণ নৈপুণ্য! করোনা মহামারীর সংক্রমণ রোধে যখন 'ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন' কার্যক্রম চলমান, তখনই ঋতু পরিবর্তনের পালায় চলে আসে ধান কাটার মৌসুম। একদিকে করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুকি, অন্যদিকে ধান না কাটলে ধেয়ে আসবে খাদ্য সংকটের ভয়াল থাবা। সেই সাথে নতুন উপদ্রব, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে কিছুদিনের মধ্যেই টানা বর্ষণ শুরু হবে, আশংকা করছে আগাম বন্যার! শেষমেষ সরকারের উপর মহল থেকে আসে সাহসী সিদ্ধান্ত। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাটতে হবে কৃষকের পরিশ্রমে অর্জিত পাকা ধান। অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত এ ফসলকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।

অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে হঠকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। অনেকেই বলেন এই সিদ্ধান্ত আত্মহত্যার সামীল। ধান কাটতে গিয়ে কৃষক ও কৃষি শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে লাশ হয়ে মাঠে পড়ে থাকবে!

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে কাজে লেগে পড়ে মাঠ প্রশাসন। কৃষি বিভাগকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক, হবিগঞ্জ জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্যার হবিগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় ছুটে বেড়িয়েছেন। অন্যান্য জেলা-উপজেলা থেকে আগত কৃষি শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থা করা, যতদিন ধান কাটবে ততদিন তাদের প্রতিবেলার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা, যারা স্বেচ্ছায় ধান কাটায় সহযোগিতা করবে, তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদান সহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেন তিনি।

এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা থেকে অনেক ধানকাটা শ্রমিক নিজ উদ্যোগে পাশ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলায় পাঠিয়েছেন, যাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ধান কাটা সমাপ্ত হতে পারে।

করোনাকালীন সময়ে বানিয়াচং উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছিলাম বিধায় ডিসি স্যারের কার্যক্রম স্বচক্ষে দেখেছি এবং স্যারের সাথে এ কর্মযজ্ঞে একাত্ম হতে পেরেছি।

ধানকাটা শ্রমিকের জন্য অস্থায়ী আবাস দেখতে স্যার ছুটে গিয়েছেন দূর্গম হাওরে। তাদের জন্য নিয়ে গিয়েছেন শুকনো খাবার ও অফুরন্ত ভালবাসা। স্যারের আহবানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের জন্য দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী উপহার। ধানকাটা শ্রমিকদের উৎসাহ দিতে প্রতিনিয়ত উপস্থিত ছিলেন আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরগুলোয়। মনে পড়ে, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও হাওরে স্যারের সাথে গিয়ে আমরা পড়েছিলাম ঝড়ো তুফানের কবলে। এসিল্যান্ডের পিকআপ ভ্যানটি প্রায় উল্টেই গিয়েছিল। আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিরাট হাওরে ধানকাটা শ্রমিকদের প্রণোদনা দিতে, সাহস সঞ্চার করতে স্যারের নেতৃত্বে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত)  জনাব মামুন খন্দকার স্যার,  কৃষি অফিসার জনার ফারুকুল ইসলামসহ গিয়েছিলাম সদলবলে। কৃষকরা জেলা প্রশাসক স্যারকে পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়। তাদের মনে বিশ্বাস জাগে, তারা একা নয়।

জেলা প্রশাসক জনাব মোহাম্মদ কামরুল হাসান স্যারের নেতৃত্বে ধানকাটা কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন হয় হবিগঞ্জ জেলায়। কোন শ্রমিক আক্রান্ত হয়নি, স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলায়। গোলা ভরা ধান স্বস্তি ফেরায় জনমনে। বাস্তবায়িত হয় সরকারের সাহসী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।

সরকারের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় প্রশাসনের কর্মচারী কর্মকর্তাগণ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণ রোধে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে প্রচারণা ও মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনা, সরকারের ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনা করা, স্যানিটাইজার সহ নিরাপত্তা সামগ্রী বিতরণ, করোনা আক্রান্ত রোগীদের শুশ্রূষা ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফলাদির ব্যবস্থা করা, ফলজ বৃক্ষের চারা রোপণ, পতিত জমিতে সবজি চাষ, বাসা ও অফিসের ছাদে ছাদকৃষি স্থাপনা সহ যাবতীয় কার্য সম্পাদনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম ছিল চোখে পড়ার মতো এবং প্রশংসার দাবীদার।

সরকারে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গ্রামে গঞ্জে ছুটে বেড়ানোর কারণে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মহোদয় নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েন। সেই সাথে প্রশাসনের বেশ কয়েকজন অফিসার আক্রান্ত হন। আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। সেই সময় যোগ্য নেতা হিসেবে জেলা প্রশাসক স্যার নিজে যেভাবে নিয়ম মেনে চলেছেন, আমাদেরও সেই ভাবে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন,  প্রতিনিয়ত আমাদের খোজ খবর নিয়েছেন, পরিবারকে সাহস জুগিয়েছেন। ক্রান্তিকালে স্যারের কাছ থেকে যে প্রেরণা আমরা পেয়েছি তা কখনোই ভুলে যাবার নয়।  স্যারের একটি কথা এখনও কানে বাজে, "তোমরাই তো প্রকৃত যোদ্ধা। সুস্থ হয়ে ওঠো, আবারও একসাথে মাঠে কাজ করবো। "

মার্চ ২০২০ হতে এ পর্যন্ত গৃহিত এসকল কার্যক্রম দেখে প্রশাসন পরিবারের সদস্য হিসেবে গর্ব অনুভব হয়। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করে গেলে সফলতা আসবেই। জোর গলায় বলতে পারি " হ্যা, আমরাই পারি। "

 

(লেখকঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আজমিরীগঞ্জ, হবিগঞ্জ)